ব্যবসাকে ব্রান্ড করার জন্য ১০ টি গুরুত্বপূর্ণ উপায়।

ব্রান্ড এর প্রডাক্ট আমরা কম বেশি সবাই ব্যবহার করতে চাই। ইতিমধ্যে বেশ কিছু কোম্পানি ব্রান্ড কোম্পানি হিসেবে সীকৃতি পেয়েছে। আশা করি এসব ব্রান্ড কোম্পানি সম্পর্কে আমার চেয়ে আপনাদের ধারণা ঢেড় বেশি। যেহেতু সেই সব ব্রান্ড কোম্পানি নিয়ে আমার পোষ্ট না তাই এসব কোম্পানির কথা বাদ থাক । এখন দেখি আপনার কোম্পানিকে ব্রান্ড কোম্পানি হিসেবে দাড় করাতে আপনার কি কি করতে হবে?


তার আগে আগে আরেক টি কথা বলে রাখি। এখানে যেহেতু প্রায় সবাই ক্ষুদে ব্যবসায়ী তাই হয়তো অনেকেই মনে করতে পারেন যে, ‘ আমি তো পিঠা বিক্রি করি, আমি তো কেক বিক্রি করি, আমি তো তেল বিক্রি করি, আমি তো শাড়ি বিক্রি করি, আমার যে ছোট ব্যবসা এটার আবার ব্রান্ড হবে কিভাবে?
আপনার জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখি সকল ব্যবসা-ই ছোট থেকে শুরু হয়।
“ছোট ছোট বালি কণা,
বিন্দু বিন্দু জল।
গড়ে তুলে মহাদেশ,
সাগর অতল”
বকবকানি একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে। এখন কাজের কথায় আসি। আপনার ব্যবসাকে ব্রান্ডিং এর জন্য শুরু থেকেই পরিকল্পিত এবং ধারাবাহিক ভাবে কিছু কাজ করে যেতে হবে।

১। একক(উইনিক) নাম নির্বাচন।

আপনার ব্যবসার ইউনিক নাম নির্বচন করা ব্রান্ডিং এর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নাম তো উইনিক হতে হবে বটেই এবং কারো আসে পাশেও যেন না থাকে তেমন একটি নাম নির্বাচন করতে হবে।
জুতার কোম্পানি বাটা একটি ব্রান্ড কোম্পানি। এখন আপনি যদি জুতার আরেকটি ব্রান্ড তৈরি করতে চান তাহলে বাটার বদলে রাটা নাম দিয়ে করতে পারবেন না।
আপনাকে আলাদা ধরণের নাম দিতে হবে। যেমন আরেকটি জুতার ব্রান্ড এপেক্স। বাটা এবং এপেক্স এর পণ্য একই হলেও এদের নামের মধ্যে অনেক তফাত আছে।
নাম যথা সম্ভব প্রাসঙ্গিক এবং ছোট হতে হবে। নাম যত ছোট হবে মানুষ তত বেশি মনে রাখতে পারবে। আমরা অনেকেই দেখি অমুকের তমুক এমন নাম দেন এতে করে একটি ব্যবসার নাম তিন/চার শব্দ এর হয়। নাম বড় হওয়া খুব দোষের না। কিন্তু ব্রান্ডিং এর জন্য ছোট নামের গুরুত্ব অপরিসীম।

২। ডোমেইন রেজিষ্ট্রেশন ।

আপনার যদি স্বপ্ন থাকে একটি ব্রান্ড প্রতিষ্ঠা করা তাহলে ব্যবসার এর নাম নির্বাচন করার সাথে সাথে ডোমেইন রেজিষ্ট্রশন করা আপনার জন্য ফরজ।
আসলে ডোমেইন রেজিষ্ট্রেশন ই আগে করতে হয় বা বলতে পারেন এই দুটি কাজ একসাথেই করতে হয়।
যখন আপনি নাম নির্বচন করবেন তখন আপনাকে সাথেসাথে দেখতে হবে সেই নামে ডোমেইন আছে কি না? যদি ডোমেইন থাকে তাহলে দেরি না করে সাথে সাথে ডোমেইন নিতে হবে। আর না থাকলে অন্য আরেকটি নাম পছন্দ করতে হবে।
ডোমেইন কি? কেন? এবং কিভাবে রেজিষ্ট্রেশন করব? এই বিষয়ে আপনাদের জানা না থাকলে কমেন্টে বলেন। আমি তাহলে আগামী কাল পোষ্ট করব।

৩। ট্রেড লাইসেন্স।

আপনার ব্যবসার আইনত মালিক হওয়ার জন্য ট্রেড লাইনসেন্স জরুরি। যতক্ষন পর্যন্ত আপনি ট্রেড লাইসেন্স করবেন না ততক্ষন আপনি আপনার ব্যবসার মালিক-ই না। ব্রান্ড করবেন কিভাবে?
অনেকে আবার ভ্যাট দেওয়ার ভয়ে লাইসেন্স করতে চান না। নতুন আইনে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বাষির্ক লেনদেন ৫০ হাজার টাকার কম হলে কোন ভ্যাট দিতে হবে না। তাই ভয় না করে লাইসেন্স করে নিজের ব্যবসার মালিক হন।

৪। ব্যাঙ্ক একাউন্ট।

ব্যবসার নামে ব্যাংক একাউন্ট করা । একটু রয়ে সয়ে প্রয়োজন বুঝে করলেও হবে।
এই ৪ টি একদম বেসিক বিষয় বললাম। যা আপনার ব্যবসা ব্রান্ডিং এর জন্য খুব জরুরি। এইটিই আপনার ব্যবসার খুটি বা পিলার। এগুলোর উপরে আপনার ব্রান্ড দাড়াবে।

৫। পণ্যের গুণগত মান।

আপনার ব্যবসার বেসিক সেটাপ এর পর সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আপনার পণ্য বা সেবার মান। আপনার ব্যবসার প্রধান বস্তু হচ্ছে আপনার পণ্য । এই পণ্য কে ঘিরেই বাকী সব কাজ। যেমন আল্লাহ পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদতের জন্য এবং পৃথিবী সহ আর বাকী সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন মানুষের সেবার জন্য। আমরা সকল সৃষ্টি থেকে উপকৃত হই এবং আমাদের জীবন মানের উন্নতি করি। এই জন্য আল্লাহ শুধু মানুষের ভাল মন্দ কাজের হিসেব নিবেন অন্য কোন সৃষ্টির কোন হিসেব নিবেন না। কারণ মানুষ এখানে মূল বিষয়।
ঠিক একই ভাবে আপনার পণ্য হচ্ছে আপনার ব্যবসায়ের মূল বিষয় বস্তু এবং এই পণ্য উৎপাদন, সংরক্ষণ, বিপণন প্রভৃতির জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা।
তাই পণ্যের গুণগত মান একদম ভাল হতে হবে যা ভোক্তাদেরকে সন্তুষ্ট করতে পারে।

৬। ওয়েবসাইট।

তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে আপনার ব্যবসাকে ব্রান্ডিং করার জন্য আপনার একটা ওয়েবসাইট থাকা খুবই জরুরী। আর আপনার ব্যবসা যদি হয় ই-কমার্স তাহলে তো ওয়েবসাইট ছাড়া সেটা সম্ভবই না।
ই-কমার্স ব্যবসার প্রধান উপাদান গুলোর মধ্যে ওয়েবসাইট অন্যতম। আবার যদি ই-কমার্স ব্যবসা নাও হয় তাহলেও ওয়েবসাইট দরকার। ওয়েবসাটের মাধ্যমে আপনার মিশন, ভিশন খুব সহজে তুলে ধরতে পারবেন। আর ই-কমার্স ব্যবসা হলে তো ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই বিক্রি করতে হবে।

৭। সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO)

ওয়েবসাইট এর পরেই আসে এসইও এর কথা। এটা এমন একটি কাজ যার মাধ্যমে আপনি আপনার ওয়েবসাইটকে বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিন যেমন- গুগল, ইয়াহু, বিং এর সাথে আপনার ওয়েবসাইটকে পরিচিত করিয়ে দেওয়া যাতে এই সব সার্চ ইঞ্জিনে কেউ সার্চ করলে আপনার কন্টেন্ট এর সাথে যদি সার্চ কিওয়ার্ড এর মিল থাকে তাহলে আপনার কনটেন্ট টি সার্চ রেজাল্ট এর প্রথম পেজে এবং একদম উপরে নিয়ে আসে।
সরাসরি ওয়েব ভিজিট খুব কম মানুষ করে । বেশির ভিজিটর আসে গুগল থেকে । কাজেই গুগল যদি আপনার ওয়েবসাইট বেশি দেখায় তাহলে আপনি বেশি ভিজিটর পাবেন। তাই এসইও করানো অপরিহার্য।

৮। কনটেন্ট ।

কনটেন্ট বলতে আপনার ব্যবসা, আপনার প্রডাক্ট সম্বন্ধে লেখা । আপনার আপনার ব্যবসা নিয়ে যত বেশি লেখবেন আপনি তত মানুষের মাথার ভেতরে ঢুকে যেতে পারবেন। ব্রান্ড তৈরি কার জন্য মানুষের মনে জায়গা করে নেওয়া হলো প্রধান চ্যালেঞ্জ। আর এটি করতে পারেন কনটেন্ট লেখার মাধ্যমে। আপনার ওয়েবসাইটকে যতবেশি কনটেন্ট সমৃদ্ধ করবেন আপনার ব্যবসা তত এগিয়ে যাবে।

৯। সোসাল মিডিয়া।

সোসাল মিডিয়া হতে পারে আপনার মার্কেটিং এর জন্য এক উত্তম বন্ধু। এখানে আপনি একদম ফ্রি এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সামান্য অর্থের বিনিময়ে বিশাল মার্কেটিং করতে পারেন। সোসাল মিডিয়ায় আপনার কনটেন্ট প্রচার করতে পারেন। সোসাল মিডিয়া হিসেবে যদিও বাংলাদেশে ফেসবুক বেশি জনপ্রিয় কিন্ত ফেসবুক ছাড়া বিশ্বে কিছু সোসাল মিডিয়া আছে যেগুলো গুরুত্বপূর্ণ। যেমন টুইটার, লিংকডইন, পিনটেরেস্ট, ইন্সট্রাগ্রাম, স্নাপচ্যাট প্রভৃতি।
কাজেই আপনার ব্যবসাকে ব্রান্ডিং করার জন্য এসব সোসাল মিডিয়ার গুরুত্বও কম নয়।

১০। পেইড সোসাল এডভার্টাইজিং।

 বর্তমানে সোসাল মিডিয়া ব্যবহার করে না এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম। সোসার মিডিয়ায় যেহেতু লোকের সোমাগম বেশি তাই একটি নির্দিষ্ট পরিমান কাস্টমারের কাছে পৌছানোর জন্য এর গুরুত্ব অপরিসীম। বহু সংখ্যক মানুষের কাছে অল্প সময়ের মধ্যে পৌছানোর জন্য পেইড এড সার্ভিস নিতে পারেন। যেমন ফেসবুকে পোষ্ট বুস্ট করার মাধ্যমে খুব সহজেই টার্গেট কাস্টমারের কাছে পৌছানো যায়। 

এই দশটি ছাড়াও আরো অনেক বিষয় আছে যেগুলো সঠিক ভাবে অনুসরণ করতে পারলে আপনার পণ্যের ব্রান্ডিং হবে ইনশাআল্লাহ।

Post a Comment

0 Comments