ই-কমার্স উদ্যোক্তার প্রয়োজনীয় গুনাবলী সমূহ।


একজন ই-কমার্স উদ্যোক্তার যে সকল বৈশিষ্ট এবং গুণাবলি থাকা প্রয়োজন।

১। সততা: একজন উদ্যোক্তাকে অবশ্যই সৎ হতে হবে এবং একটি সৎ উদ্দেশ্যেই তাকে ব্যবসায় নামতে হবে। ব্যবসা করে বড়লোক হব এই চিন্তা না করে চিন্তা করতে হবে যে আমি আমার ব্যবসা দ্বারা মানুষকে কিভাবে সেবা দিতে পারব। সেটা অবশ্যই নিজের টাকা লস দিয়ে না।

২। শিক্ষানুরাগী : শেখার মানসিকতা থাকতে হবে। শুধু শেখার মানসিকতা থাকলেই চলবে না বরং প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বিষয়ে শিখতে হবে। ই-কমার্স তথ্য প্রযৃক্তি নির্ভর শিল্প এখানে শেখার কোন শেষ নেই। প্রতিনিয়ত সব কিছু আপডেট হচ্ছে। তাই সব সময় এসব বিষয়ে স্টাডি করতে হবে। নিজের ব্যবসা সম্পর্কে প্রচুর স্টাডি করতে হবে। একই ধরণের ব্যবসা যারা করে তাদের আদি অন্ত, সফলতা ব্যর্থতা এবং চ্যলেঞ্জ সম্পর্কে জানতে হবে। শুধু তাদের লাভ দেখেই সেই রকম একটা ব্যবসায় নেমে পরলে হবে না।

৩। কঠোর পরিশ্রমী হতে হবে: চাকরি পরাধীন আর ব্যবসা স্বাধীন। এই কথার সাথে আমরা সবাই খুব বেশি পরিচিত। কিন্তু অনেকেই এই কথার ভুল ব্যাখ্যা করে থাকি। আমরা মনে করি যে , চাকরি করলে আমার স্বাধীনতা থাকে না মানে ৮ টা -৫টা ডিউটি। ঠিক মতো ছুটি পাইনা। শালার বিয়েতে যেতে পারিনা।শালীর গায়ে হলুদে থাকতে পারিনা ইত্যাদি ইত্যাদি। আর ব্যবসা করলে আমি স্বাধীন, আমি রাজা। শালার বিয়ে, শালীর গায়ে হলুদ, বউকে নিয়ে মধুচন্দ্রিমা, যখন যা খুশি করে বেরাব। কিন্তু বাস্তবে ব্যবসায়ীরা অনেক সময় নিজের বিয়েও খেতে পারে না। এখানে নিজের মর্জি মতো চলা যায় না। আপনাকে কাষ্টমারের দিকে খেয়াল রেখেই চলতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ আপনার বাড়ির পাশের মুদি দোকানির কথাই চিন্তে করুন। সে কি পারে সকাল ছয়টার পরিবর্তে ১০ টায় দোকান খুলতে? আবার রাতের পরিবর্তে বিকেলেই দোকান বন্ধ করতে? সেকি পারে ঈদে শ্বশুর বাড়ি যেতে? আর কোন দোকানি যখন তার খেয়াল খুশি মতো এসব করবে তখন সে তার কাষ্টমার হারাবে। ব্যবসা লাঠে উঠবে।
এখন বলতে পারেন যে ভাই তাহলে এতো দিন যে কথা শুনে এসেছি সেটা কি মিথ্যা?
না । মিথ্যা না। কিন্তু আমরা মিথ্যা ব্যাখ্যা করি।
ব্যবসায় স্বাধীণতা আছে মানে আপনার প্লান পরিকল্পনা করার স্বাধীণতা আছে। আপনি আপনার ব্যবসাকে কি ভাবে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবেন সেই পরিকল্পনা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার স্বাধীনতা আছে। আপনি বাজার বিশ্লেষন করে ক্রেতা সন্তুষ্টির জন্য কোন পন্থা অবলম্বন করবেন সেই স্বাধানতা আপনার আছে।
এখানে স্বাধীনতা মানে এই না যে আপনার ইচ্ছে হলে কাজ করলেন আর না হলে করলেন না। যদি এটা করেন তাহলে ব্যবসায় টিকে থাকতে পারবেন না।
তাই, ব্যবসায়ী হতে হলে কঠোর পরিশ্রমী হতে হবে।

৪। ধৈর্য্যশীলতা: উদ্যোক্তাকে ধৈর্য্যশীল হতে হবে। ধৈর্য্য ছাড়া এই পথে আসাই যাবে না। ব্যবসা করতে গেলে অনেক বাধা বিপত্তি আসবে সেগুলো ধৈর্যের সহিত মোকাবিলা করতে হবে।

৫। দূরদৃষ্টি সম্পন্ন হতে হবে: একজন উদ্যোক্তাকে দূরদৃষ্টি সম্পন্ন হতে হবে। কাস্টমার ট্রেন্ড বুঝে আগাম পরিকল্পনা নিতে হবে। আজ থেকে দুই বছর পর মার্কেট কেমন হতে পারে সেটা বুঝতে হবে। এই জন্য কোন যতীশ বাবার কাছে গেলে হবে না। নিজে প্রচুর পড়াশোনা করে সেই দক্ষতা অর্জন করতে হবে।

৬। ইংরেজি এবং আইটি জ্ঞান সম্পূর্ণ হতে হবে:
ই-কমার্স যেহেতু আইটি নির্ভর শিল্প তাই এক জন উদ্যোক্তাকে আইটি জ্ঞান সম্পন্ন হতে হবে। আর এসব জ্ঞান অর্জনের জন্য ইংরেজি জানতে হবে।
(ইংরেজি শেখার জন্য Search English , আইটির বেসিক জানার জন্য Digital Skills for Bangladesh এবং ই-কমার্স সম্পর্কে জানতে Women and e-Commerce Forum গ্রুপে যোগ দিতে পারেন। )

৭। সময়ানুবর্তিতা: সময়ের কাজ সময়েই করতে হবে। কথায় আছে, সময়ের এক ফোঁড় আর অসময়ের দশ ফোঁড়। কোন কাজ, পরে করব বলে ফেলে রাখা যাবে না।

৮। স্বল্পভাষী ও মিষ্টভাষী: একজন উদ্যোক্তাকে বলার চেয়ে বেশি শুনতে হবে। যখন কারো সাথে কথা হবে তখন সেই ব্যক্তিকে কথা বলার সুযোগ দিতে হবে। সে কোন প্রশ্ন করলে সুন্দর করে তার জবাব দিতে হবে। স্বল্পভাষী মানুষকে সবাই ভালবাসে। এভাবে অন্যের সাথে সু-সম্পর্ক গরে উঠে যা খুব প্রয়োজনীয়।

৯। দৃঢ় মনবল: সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য দৃঢ় মনবল থাকতে হবে। একটি কাজ করতে গেলে হাজারটা বাধা আসতে পারে। কিন্তু হার মেনে লড়াই করে যেতে হবে। সফলতা না আসলেও অভিজ্ঞতা আসবে যা পরবর্তিতে সুফল বয়ে আনবে।

১০। নেটওয়ার্কিং: অন্যান্য উদ্যোক্তা গণের সাথে নেটওয়ার্ক গরে তুলতে হবে। অনেক জন মিলে যে কোন সমস্যা খুব সহজে সমাধান করা যায়।
নিজেদের ভেতরে পারষ্পারিক আলোচনা এবং পরামর্শের মাধ্যমে অনেক সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচিত হয়। তাই নেকওয়ার্কিংকে গুরুত্ব দিতে হবে।

Post a Comment

0 Comments