শফীউদ্দিন সরদার নাটোরের কৃতি সন্তান।

 

শফীউদ্দিন সরদার (ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত)

বরেণ্য কথা সাহিত্যিক শফিউদ্দিন সরদার নাটোরের একজন কৃতিসন্তান । গল্প, কবিতা, নাটক, উপন্যাস, রম্য, শিশু সাহিত্য সর্বোপরি সাহিত্যের প্রায় সকল শাখায় তার পদচারণা বিদ্যমান। নাটোরের এই  কিংবদন্তি ১৯৩৫ সালের  ১লা মে নাটোর জেলা সদরের হাটবিলা নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম রহমাতুল্লাহ সরদার এবং মায়ের নাম খুকী বেগম। বাল্যকালে উনার বাবা মারা যাওয়ায় অনেক কষ্ট করে উনার মা উনাকে তৎকালীন গ্রাম্য টাউট বাটপার, মাতাব্বর এবং নায়েবের অত্যাচার উপেক্ষা করে বহুত কষ্টে  লেখাপড়া করান। জনাব শফিউদ্দিন সরদার ১৯৫০ সালে ম্যাট্রিকুলেশন (এস এস সি) পাশ করার পর কারমাইকেল কলেজ থেকে আইএ, বিএ অনার্স এবং এমএ পাশ করার পর ঢাকা টিটি কলেজ থেকে বিএড ডিগ্রি লাভ করেন। অতঃপর লন্ডন থেকে ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন ডিগ্রি লাভ করে দেশে ফিরেন। 




দেশে ফিরে তিনি শিক্ষকতাকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন এবং পর পর কয়েকটি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করার পর স্ব উদ্যোগে নিজ এলাকায় (হাটবিলার পাশের গ্রাম ) করেরগ্রামে "করেরগ্রাম হাইস্কুল" প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানেও তিনি প্রধান শিক্ষকের দ্বায়িত পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি পর্যায়ক্রমে রাজশাহী সরকারি কলেজ এবং সরদহ ক্যাডেট কলেজে অধ্যাপনা করেন এবং বানেশ্বর কলেজ, রাণীভবানী মহিলা কলেজ এবং গ্রীণ একাডেমী, নাটোর এর অধ্যক্ষ হিসেবে দ্বায়িত পালন করেন। কর্ম জীবনে তিনি ১৯৮২-১৯৮৮ সাল পর্যন্ত প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের ও দ্বায়িত পালন করেন। 



জনাব শফিউদ্দিন সরদার ছাত্রজীবন থেকেই টুকিটাকি লেখালেখি শুরু করেন। মঞ্চ নাটক রচনা এবং অভিনয়ে তিনি ছিলেন পারদর্শী। বাংলার ইতিহাস কে তিনি তার উপন্যাসের মাধ্যমে খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন।  গত তিন দিনে তার লেখা তিনটি উপন্যাস (মুসাফির, চলনবিলের পদাবলি এবং বখতিয়ারের তলোয়ার) পড়েছি । এর মধ্যে মুসাফির ছাড়া বাকী দুটি উপন্যাসই ঐতিহাসিক। চলন বিলের পদাবলিতে তিনি চলনবিলে এলাকার অতীত কৃষ্টি কালচার ফুটিয়ে তুলেছেন। এবং বখতিয়ারের তলোয়ার উপন্যাসে মুসলিম বীর সেনা ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির সংগ্রামী জীবন পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন। 



মুসাফির উপন্যাসটিও অসাধারণ। একজন ধর্মপ্রাণ একনিষ্ঠ মুসলিম এর আচরণে প্রভাবিত হয়ে একজন নাস্তিক, তথাকথিত প্রগতিশীল  দ্বীন ইসলামের ছায়া তলে চলে আসার গল্প  খুব সুনিপুণ ভাবে ফুটে উঠেছে মুসাফির উপন্যাসে। 


জনাব শফিউদ্দিন সরদার পরবর্তীতে নাটোর শহরের শুকুলপট্টিতে বাড়ি করেন । রাণীভবানী মহিলা কলেজ এবং গ্রীণ একাডেমীর পাশেই তার বাসভবন। 

নাটোরের এই কিংবদন্তি লেখক ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ইহজগত ত্যাগ করেন।

আল্লাহ তাঁকে বেহেস্ত নসীব করুন।

Post a Comment

0 Comments